কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির আকার দেখতে
কিছুটা সীমের বিচির মত এবং রং খানিকটা লালচে বাদামি। এটি দেহের রেচন তন্ত্রের একটি
প্রধান অংশ। কিডনির প্রধান কাজ হল আমাদের শরীরের
রক্তকে পরিশোধন করে, অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেয় এবং রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কিডনির কাজ
কিডনি মানুষের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপুর্ণ একটি হরমন তৈরি করে। যার নাম হল এরিথ্রোপোয়েটিন। এই হরমনের প্রধান কাজ হল শরীরের জন্য রক্ত তৈরি করা। মানুষের শরীরের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ রক্ত তৈরি হয় কিডনিতে। শুধু তাই নয় কিডনি মানব শরীর থেকে রক্ত পরিশোধন ও বর্জ্য পর্দাথকে শরীর থেকে বের করার কাজ করে। হার্ট পাম্পের মাধ্যমে রক্তকে কিডনিতে পাঠায় সেখানে কিডনি রক্তকে পরিশোধন করে পুনরায় আবার হার্টে ফেরত পাঠায়। এই কাজ কিডনি সার্বক্ষনিক করছে। প্রতিদিন একটি কিডনি মানব শরীর থেকে গড়ে ১২০ লিটার থেকে ১৫০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে এবং প্রায় দুই লিটার বর্জ্য মানব শরীর থেকে বের করে দেয়। কিডনি মানুষের শরীরের ছাকনী হিসাবে কাজ করে। আমাদের শরীরে যেকোন বর্জ্য ও দূষিত পর্দাথ কিডনি বাইরে বের করে দেয়। এই বর্জ্য পদার্থ ৯৫ শতাংশ প্রসাব আকারে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। বাকি বর্জ্য ঘামের মাধ্যমে বের হয়, কিছু মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয় এমনি কি কিছু পদার্থ মানুষের নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও বের হয়। মানুষের শরীরে যতটুকু জলের প্রয়োজন কিডনি কেবল মাত্র সেই টুকু শরীরে রেখে দিয়ে বাকি অতিরিক্ত জল বের করে দেয়। আমাদের প্রচলিত ধারনা অনুসারে বলা হয় বেশি করে জল খেলে কিডনি ভাল থাকে কিন্তু এটার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
কিডনি রোগ
কিডনি রোগ সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। আকস্মিত কিডনি কাজ না করলে বা কিডনি ফেইল করলে তাকে একিউট কিডনি ডিজিজ এবং দীর্ঘস্থায়ী ভাবে কিডনি কাজ না করলে তাকে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বলে।
একিউট কিডনি ডিজিজ
অনেক সময় দেখা যায় হটাৎ করে কিডনি সমস্যা দেখা দেয় আবার কখনো খুব দ্রুত কিডনিতে সমস্যা হয়। যেমন দুর্ঘটনার ফলে আবার শরীর থেকে রক্ত ক্ষরন হলে কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধ ও বিষক্রিয়া ফলে কিডনির কাজ বন্ধ হতে পারে। কিডনির কাজ করার ক্ষমতা হটাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে তাকে একিউট কিডনি ডিজিজ বলে। ডাক্তারি ভাষায় এই অবস্থাকে রেনাল ফেইলার বলে বিবেচিত হয়। একিউট কিডনি ডিজিজ থেকে কখনো কখনো কিডনি স্থায়ীভাবে কার্যকারিতা হারায়। আবার এই অবস্থা থেকে সুচিকিৎসার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ
বেশিরভাগ সময় কিডনির কার্যকারিতা খুব ধীরগতিতে নষ্ট হতে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় একজন মানুষের কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। এটা এতটাই নীরবে ঘটে যে মানুষের পক্ষে বুঝতে পারা খুব কঠিন হয়ে যায়। খুব নীরবে কিডনি রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাধে বলে একে নীরবঘাতী রোগ বলা হয়। দীর্ঘস্থায়ী ভাবে কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে পুনরায় ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিডনি বিকল হওয়া রোগীর স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা খুব বেশী এমন কি উচ্চ মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। সকলের কিডনি রোগের ব্যপারে অধিক সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাই নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে রোগ নির্নয়ের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।