কিডনি মানব শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অঙ্গ। কিডনির আকৃতি খানিকটা শিমের বিচির মত এবং আকারে ১৬-২০ সেমি লম্বা। এটি শরীরের পাঁজরের খাঁচার নিচে মেরুদণ্ডের উভয় পাশে অবস্থিত। কিডনি শরীরের PH এবং লবনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও ইলেক্ট্রোলাইট ও ফ্লুইডের ভারসাম্য বজায় রাখে ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস ভালো থাকে। আমাদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য কিডনির ভালো থাকার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সুস্থ কিডনি শরীরের পরিস্রবন ও বর্জ্য নিষ্কাশনের পাশাপাশি কিছু হরমোন তৈরি করে যা শরীর গঠনের জন্য সাহায্য করে।
কিডনি ভালো রাখা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রতিটি মানুষকে জানা উচিৎ কিভাবে কিডনিকে ভালো রাখা যায়। মাত্র কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে ভাল থাকবে আমাদের কিডনি।
নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে মানব দেহের অন্যান্য অঙ্গের মত কিডনিও ভালো থাকে। নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম কিডনি ছাড়াও হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস ভাল থাকে। ব্যায়াম করা মানে এই নয় জীমে গিয়ে অনেক সময় কাটানো। শরীর ভালো রাখতে আমরা প্রতিদিন সময় করে ২০-৩০ মিনিট হাটা, দৌড়ানো কিংবা সাইকেল চলানো যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে যেমন আমাদের শরীর ভালো থালে তেমনি আমাদের মন ফুরফুরা থাকে। শরীর ও মন ভালো থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুন বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভাল রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা খুব প্রয়োজনীয়।
সুষম খাবার গ্রহন করা
শারীরিক গঠন ও সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সুষম খাবার খাওয়া দরকার। সুষম খাবার বলতে যে খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিক ভাবে থাকে। কিডনির সুস্থ্যতার জন্য প্রচুর পরিমানে শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। এই সকল খাবার কিডনিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। চর্বি কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকারক। মাংসে ফাইবারের পরিমান বেশি থাকে। এই ফাইবার কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে মাংসের পরিমান কমিয়ে আনা উচিৎ।
রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বজায় রাখা
সারা পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর পরিমান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে কিডনি রোগী। ডায়াবেটিস কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারন। যখন ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় থাকে তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই গ্লুকোজ কিডনির ছোট ছোট রক্ত নালীকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ফলে কিডনির ফ্লিটারিং ক্ষমতা কমে যায়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে গেলে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। যে সকল খাবারে অধিক মাত্রায় শর্করা রয়েছে সেই খাবারগুলো কমিয়ে আনা বা এড়িয়ে চলা ভালো।
প্রচুর পরিমান তরল খাবার গ্রহন করা
কিডনি ভাল রাখতে প্রচুর তরল বা বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নাই। কিডনি ভালো রাখতে পর্যপ্ত পানি পান করতে হবে এবং এই পানি অবশ্যই হতে হবে নিরাপদ। অসুস্থতায় বা ব্যায়ামের পর আমাদের শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। জ্বর, ডায়রিয়া বা বমি হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি বের হয়ে যায় ফলে শরীরে পানির ঘাটতি বা ডিহাইড্রেটেড হয়। এই সময় তরল বা পানি পান না করলে পানির ঘটতি জনিত কারনে কিডনি হটাৎ বিকল হয়ে যেতে পারে। পানি কিডনি থেকে টক্সিন বা সোডিয়াম পরিস্কার করে। তাই একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।
ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
ধূমপান একটি ভয়াবহ বদঅভ্যাস। ধূমপানের ফলে ধীরে ধীরে আমাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ করে। ধূমপান আমাদের শরীরের ব্লাডভ্যাসেল কে ক্ষতি করে ফলে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। এছাড়া অ্যালকোহল আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা মাত্রাতিক ভাবে কমিয়ে ফেলে । ফলে একটি পর্যায়ে কিডনি আর কাজ করে না। নীরবঘাতি এই রোগ থেকে বাঁচতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধূমপান ও অ্যালকোহলকে না বলুন।
অতিরিক্ত পেইন কিলার ব্যবহার না করা
আজকাল আমরা সামান্য একটু ব্যথা হলেই আমরা পেইন কিলার খাওয়া আরম্ভ করি। যদি নিয়মিত অভার দ্যা কাউন্ট ( ) ব্যথার ওষুধ বা পেনিসিলিন কিংবা সালফোনামাইডের মত ওষুধ খেতে থাকেন। তাহলে এই পেইন কিলার জাতীয় ওষুধ আমাদের কিডনির কোষকে ক্ষতি করে। ফলে আস্তে আস্তে আমাদের কিডনি নষ্ট হতে থাকে। তখন আমাদের শরীরের বর্জ্য নিস্কাশন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় হরমন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
প্রসাব আটকে রাখা
আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাবলিক টয়েলেট নাই। তাই বাইরে বের হলে আমাদের প্রসাব আটকে রাখার প্রবণতা রয়েছে। আবার অনেকের মাঝে বিশেষ করে নারীদের মাঝে বাইরে বের হলে পানি পান না করার প্রবণতা দেখা দেয়। এই প্রবণতার প্রধান কারন পাবলিক টয়েলেটের পরিবেশ। অনেকক্ষণ প্রসাব আটকে রাখলে বা কম পানি পান করলে কিডনিতে চাপ পরে। ফলে কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস চলতে থাকলে কিডনি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়।