গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা

একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও আনন্দের সময় হলো মাতৃত্বকালীন সময়। এই সময়ে একজন নারী-নারী থেকে মা হয়ে থাকে। তখন তার মাঝে শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে। মানুষের শারীরিক গঠন ও মানষিক বিকাশের জন্য  খাবার অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভবতী অবস্থায় একজন মায়ের খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের খাবারের তালিকায় প্রতিদিন সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা দরকার। অন্যান্য সময়ের তুলনায় গর্ভকালে নারীর বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়ে থাকে। কারন এই সময়ে গর্ভের সন্তান তার মায়ের কাছ থেকে বাড়তি পুষ্টি পেয়ে থাকে। এই পুষ্টি  শিশুর শারীরিক বিকাশ বা মানুষিক বিকাশে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং শিশু স্বাস্থ্য সঠিক রাখার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।  

গর্ভাবস্থায় খাবার কেমন হওয়া উচিৎ 

জীবনের সকল স্তরে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার। কিন্তু গর্ভাবস্থায় নারীর খাদ্য তালিকার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই সময়ে একজন মায়ের তার নিচের খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও শারীরিক ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম বিষয়ে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গর্ভবতী মাকে সংক্রমণের হাত থেকেই রক্ষা করবে না বরং তাকে মানসিকভাবে সন্তুষ্টি ও প্রশান্তি পদান করবে। এতে গর্ভের সন্তান সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া ও ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকার প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রতিদিনের খাদ্যে পুষ্টিগত সকল চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে এবং পূরণ করতে সাহায্য করবে। এই তালিকা হবে সকল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার ও পানীয় সমন্ধে সঠিক ধারণা প্রদান ও বৈজ্ঞানিকভাবে পূরণ করার কৌশল আরোপ করা।  

গর্ভাবস্থায় খাবারের চাহিদা ও খাদ্য রুচি মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। এমন অনেক নারী পাওয়া যায় যাদের বিশেষ কিছু খাবারে ভীষণ  মাত্রায় রুচি থাকে। তবে সেসব খাবারও বেশি পরিমান খাওয়া উচিৎ নয়, পরিমিত খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ভাল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় নারীর খাবার ব্যাপারে ভীষণ অরুচি থাকে। এমন সময় বমি বমি ভাব হয়, কখনও বুক জ্বলা করতে পারে। এমন সময়ে শুধুমাত্র খাবার খেয়ে পুষ্টির সকল চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে। তখন খাবারের পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল ঔষুধ হিসাবে খাওয়া লাগতে পারে। 

গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান

ফলিক এসিডঃ ফলিক এসিডের অপর নাম হলো ভিটামিন বি৯। এটি ভিটামিন বি গ্রুপের একটি পুষ্টিকর উপাদান যা গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এটি একটি ভ্রূণের নিউরাল টিউবের ত্রুটি এবং অ্যানেনসেফালি প্রতিরোধে দারুনভাবে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস বা ফ্রাস্ট ট্রামিস্টার এ গর্ভবতী মাকে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড খেত হয়। ভিটামিন বি৯ প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক, ফলমূল ও বাদামে প্রচুর পরিমাণ বি৯ পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত খাবারের পাশাপাশি গর্ভবতী মাকে ফলিক এসিডের ওরাল ট্যাবলেট খেতে পারে। 

আয়রনঃ আয়রন আমাদের শরীর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এর অভাবে লোহিত কনিকা উৎপাদন হয় না। মানব শরীরে রক্ত শূন্যতার প্রধান করন হল আয়রনের ঘাটতি। গর্ভাবতী নারীর দেহে স্বাভাবিকের তুলনায় রক্তের পরিমাণ বেশি বৃদ্ধি পায় তাই এই সময় আয়রনের চাহিদা বাড়ে। আয়রনের অভাবে গর্ভের বাচ্চার অ্যানিমিয়া হতে পারে এবং প্রসবের সময় ঝুঁকি হতে পারে। মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি, নান শস্যজাতীয় খাবার, শুকনো ফল, শিমের বীজ ও মটর জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। গর্ভাবস্থায় এই খাবারের পাশাপাশি মুখে খাওয়া ঔষধ খাবার প্রয়োজন হতে পারে। 

ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম মানব দেহের জন্য খুব গুরুত্বপুর্ণ খনিজ উপাদান। যা মানব শরীরের দাঁত ও হাড় মজবুতে সাহায্য করে এবং পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখার কাজ করে ক্যালসিয়াম। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, সবুজ শাক-সবজি, মটরশুঁটি ও ডাল, কিছু ফল এবং বাদাম।

প্রোটিনঃ প্রোটিন হল এক ধরনের ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। এটি দেহের টিস্যু তৈরি ও মেরামত এবং এনজাইম ও হরমোন উৎপাদনে কাজ করে। প্রোটিন ভ্রূণের সার্বিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্ক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। প্রোটিন যুক্ত খাবারের মধ্য রয়েছে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, ব্রকলি, বাদাম দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি। গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে শারীরিক দুর্বলতা, পেশি ক্ষয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। 

ওমেগা-৩ঃ ওমেগা-৩ হলে এক প্রকার ফ্যাটি এসিড বা একপ্রকার চর্বি যা আমাদের শরীরেকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগ, চোখের স্বাস্থ্য, মস্তিস্কের কার্যকারিতে, জয়েন্টের ব্যাথা ও দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা -৩ ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও চোখ গঠনে সাহায্য করে তাছাড়া মায়ের মানসিক সুস্থতার সহায়ক। সাধারণত মাছ, বাদাম ও উদ্ভিজ্জ তেলে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ পাওয়া যায়।

ফিডব্যাক সমূহ

New Feedback

স্বাস্থ্য কথা

নতুন যুক্ত

Logo