একটি স্বাস্থ্যকর খাবার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অন্যন্য ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, শরীরের শক্তি উৎপাদন ও মানসিক সুস্থ্যতার জন্য সাহায্য করবে। তাই খাবার আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্ব বহন করে। ডায়াবেটিস হলেই কিছু খাবার চিরতরে বাদ দিয়ে দিতে হবে এমন কোন তথ্য নেই। তবে কিছু খাবার অবশ্যই নিয়ন্ত্রন করতে হবে। মনে রাখা ভাল পরিমিত খাদ্যাভ্যাস সকলের জন্যই উপকারী। যে ধরনের ডায়াবেটিস হোক না কেন ভাল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী ও মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিক কখনোই এক হতে পারে না। আলাদা আলাদা রোগীর জন্য খাদ্য তালিকা আলাদা হয়ে থাকে। তবে খাদ্য তালিকা রোগীর বয়স, ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন, জীবনে যাপনের ধরন ও অর্থসামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সকল ডায়াবেটিস রোগীকে কিছু বিষয়ের উপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
বৈচিত্রময় খাবার গ্রহনঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি একই প্রকার খাবার থাকে তাহলে সেটা বিরক্তির কারন হতে পারে। বিরক্তি ঠেকাতে রোজ একই প্রকার খাবার না খেয়ে খাদ্য তালিকায় ভিন্নতা আনা প্রয়োজন। একজন সাধারণ মানুষের মত একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় যেন সকল প্রকার আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন বা সুষম খাবারের সকল উপাদান থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং তা যেন ভিন্নতা পায়।
কিছু খাবার কমানোঃ খাবার যেমন শরীরের জন্য ভাল আবার খাবারই হতে পারে অসুস্থ্যতার কারন। তাই খাবার পরিমিত পরিসরে গ্রহন করা উচিৎ। কিছু খাবার রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগী বা সাধারণ মানুষের ও কমানো এমনকি বাদ দেওয়া দরকার। যেমনঃ চিনি, লবন ও চর্বিজাতীয় খাবার। এই খাবার গুলো আমাদের দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক এবং একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কোন অঙ্গের ক্ষতির কারন হতে পারে।
সময়মত খাবার গ্রহন করাঃ আমাদের মাঝে প্রায়ই দেখা যায় সময় মত খাবার না খাবার প্রবণতা। সঠিক সময়ে প্রতিদিনের তিন বেলার খাবার খাওয়া সুস্বাস্থ্য গঠনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। অনেকই মনে করি সকালের নাস্তা না করলে বা পরে খেলে আমাদের কোন সমস্যা হয় না, এটা খুবই ভুল ধারণা। এতে আমাদের দেহে দীর্ঘমেয়াদী কোন সমস্যা তৈরি হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে তিন বেলা খাবার গ্রহন অত্যন্ত অপরিহার্য। কোন একবেলা খাবার না খাওয়া হলে ডায়াবেটিস মাত্রা বেড়ে যাবার ঝুঁকি থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খাবার ও সঠিক সময়ে খাবার গ্রহন করা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। প্রতিদিন আমিষ, শর্করা, ফ্যাট ও প্রটিনযুক্ত খাবার সঠিক অনুপাত বজায় রেখে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। সকল প্রকার খাবারের মাঝে ভিন্ন মাত্রায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) রয়েছে। কম মাত্রায় গ্লাইসেমিয়া ইনডেক্স রয়েছে এমন খাবার খেলে শরীর সুস্থ্য থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাছাড়া ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজিতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে এবং ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো স্বাস্থ্যকর ও শরীরের জন্য খুব উপকারি। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক অন্যান্য সবুজ শাকসবজি প্রচুর পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে। কারন এই শাকসবজ গুলোতে কার্বোহাইড্রেট ও শর্করার পরিমাণ কম থাকে এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। এই খাবারগুলতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকে।
ফলমূলঃ অনেকের মাঝেই একটি ধারনা আছে ডায়াবেটিস রোগীর ফলজাতীয় খাবার ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটা ভুল ধারনা, তবে বেশি মিষ্টিজাতীয় ফল ও মাটির নিচেয় উৎপাদিত ফল না খাওয়াই ভাল। টাটকা, সবুজ, শুষ্ক ও প্রক্রিয়াজাত ছাড়া যেকোন ফল খাওয়া যেতে পারে। আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের অভাব পুরন করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ফলের জুস এবং ফল দিয়ে বানানো বিভিন্ন রকমের তরল খাবার পরিহার করাই উত্তম কারন এতে আঁশের পরিমাণ কম থাকে ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রে বেড়ে যায়।
প্রোটিনযুক্ত খাবারঃ মাছ,মাংস ও ডিমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে। যা আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদনে সাহায্যে করে এবং পেশি সুস্থ্য রাখে। তবে রেড মিট বা লাল মাংস খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উত্তম। বাজারে বিভিন্ন প্রকার প্রক্রিয়াজাত মাংস পাওয়া যায় যা খেলে ক্যান্সার ও হার্টের অসুখ বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ ও প্রোটিন থাকে। যা আমাদের হার্টকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
শস্যজাতীয় খাবারঃ শস্যজাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি , মিষ্টি আলু এবং কলাতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। এই খাবার গুলো আমাদের দেহে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু লাল চাল, লাল আটা, ওটস ও বার্লির মত শস্যজাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। এই খাবার গুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে এবং হজম হতে অনেক বেশি সময় লাগে। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে রাখে।
দুগ্ধজাতীয় খাবারঃ দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমনঃ দুধ, দই ও পনির এ প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে যা আমাদের হাড়, দাঁত ও পেশি গঠনে সাহয্য করে। কিন্তু এই খাবার গুলোতে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ চর্বি বা ফ্যাট থাকে। যা রক্তে ক্ষতিকারক ক্লোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা স্বস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম কারন। তাই কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া ও অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার না খেয়ে বিকল্প বেঁছে নেওয়া খুবই জরুরী।